বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ইতিহাসের সেই চেনা পথেই এসেছে। হঠাৎ্ করে এক দিনে কোনো মেজর সাহেবের ডাকে আসেনি। তা আসা সম্ভব না বলেই আসেনি।যেভাবে আসার নিয়ম সেভাবেই এসেছে। সেই ইতিহাসই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস।অন্য ইতিহাস কেউ বলতে চাইলে তা ভুয়া, বিকৃত, স্ব-কল্পিত। বাংলাদেশের ভন্ড, নতজানু ও স্বার্থসিদ্ধি প্রবণ ঐতিহাসিক, তথাকথিত অনগ্রহ প্রত্যাশী বুদ্ধিজীবী ও আমলা আর ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই স্ব-কল্পিত বা মনগড়া ইতিহাস তৈরির নানা কুমতলবকে নানা পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা এবং পূর্বের লেখা ইতিহাস সংশোধনের সিঁদেল চোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস কবে থেকে শুরু তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। চর্যাপদের কবি ভুসুক যেদিন দুঃখ-বেদনা ও বঞ্চনার আত্ম প্রশ্নে বিদ্ধ হয়ে বললেন, ‘আজি ভুসুক বাঙালি ভইলি’ (আজ ভুসুক বাঙালি হলো) বৌদ্ধ বাঙালি সিদ্ধাচার্যের সেই উচ্চারণ বাংলার জাগরণ আর বাঙালির জাতিসত্তা নির্মাণে অর্থাৎ দূরদৃষ্টিতে স্বাধীনতার পথরেখা (এখনকার পরিভাষায় রোডম্যাপ) তৈরিতে কোনোই অবদান রাখেনি এমন তো নয়! বাঙালি যখন তার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নির্মাণে চর্যাপদকে সামনে রাখে তখন কবি ভুসুকের ওই বাণী বাঙালিত্বের জন্মচিৎকারের মতো অনন্য ব্যঞ্জনা লাভ করেছে। মহামতি বুদ্ধের অনুসারী বাঙালি কবিই তখন বাঙালিত্বের তথা বাঙালি জাতির বিজয়ের নজিব হয়ে উঠেছেন। এর কয়েক শ বছর পরে ইংরেজ শাসনামলে শেরপুর-জামালপুরে পাই বাঙালি মুসলমান কৃষক টিপু পাগলা, উত্তরবঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান ফকির এবং সন্ন্যাসী বিদ্রোহীদের, পশ্চিম বাংলার নারকেলবাড়িয়ার তিতুমীরকে (মীর নিসার আলী)। আর ১৯২০-৩০-এর দশকে স্বদেশী আন্দোলনের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে দেখি ইংরেজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে জীবনদান করে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে এবং পরে স্বাধীনতার সশস্ত্র লড়াইয়ে কৃষক বিদ্রোহের অনন্য বীরগাথাও আমরা বাংলার ইতিহাসে খুঁজে পাই।কিন্তু এর বাইরে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি, বিপ্লবী রাজনীতি এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির অবদানও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাঙালির জাতিসত্তা নির্মাণে অসামান্য। আর এই সংস্কৃতির ভিত্তির ওপর নির্মিত হয়েছে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র। সে জন্য এ রাষ্ট্রের স্রষ্টা শেখ মুজিব বলতে পারেন : ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময়ও বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা।’ আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হয়েছে মূলত বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তির ওপর। তাই আমরা শুধু রাজনৈতিক বিদ্রোহীদের এই রাষ্ট্র সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না, একই সঙ্গে ভুসুক থেকে সপ্তদশ শতকের আবদুল হাকিম এবং উনিশ-বিশ শতকের মুকুন্দদাস, রমেশ শীল, দুদু শাহ, জালাল খাঁ, মাইজভান্ডারী তরিকার সৈয়দ আহমদউল্লা এবং সুকান্ থেকে শামসুর রাহমানকে বাঙালির রাষ্ট্র সৃষ্টির অন্যতম রূপকার বলে মনে করতে পারি। তাঁদের সবার চিন্তার সমন্বয় সাধন করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক, মানবিক, ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক চারিত্র্য নির্ধারণ করেন। সামান্য কোনো পেশাজীবীর পক্ষে ইতিহাসের এত বড় ক্যানভাসকে চিন্তা ও কর্মপদ্ধতিতে ধারণ করে রাষ্ট্র গঠন করা একেবারেই অসম্ভব। এখানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনন্যতা-তিনি ভিন্নধর্মী বা স্বকীয় রাষ্ট্র স্থপতি বাঙালির শত-সহ¯্র বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি এবং দুঃখ-বঞ্চনাকে ধারণ করেই সৃষ্টি করেন এই অনন্য জাতি-রাষ্ট্র-বাংলাদেশ।
সম্পর্কিত সংবাদ
শিক্ষাঙ্গন
শাহজাদপুর খুকনী বহুমুখী উচ্চ কিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত
শামছুর রহমান শিশির, নিজস্ব প্রতিবেদক : সিরাজগঞ্জের তাঁতসমৃদ্ধ শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের খুকনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যা...
শিল্প ও সাহিত্য
শাহজাদপুরে লোকনাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শাহজাদপুরে গত বৃহস্পতিবার রাতে লোকনাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয় । শাহজাদপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বর...
তথ্য-প্রযুক্তি
শাহজাদপুরে তথ্য অধিকার বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আজ মঙ্গলবার দিন ব্যাপী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হলরুমে তথ্য অধিকা...
শাহজাদপুরে বাংলা লোকনাট্য উৎসব হচ্ছে আজ
ডেস্ক রিপোর্টঃ হাতের মুঠোয় হাজার বছর, আমরা চলেছি সামনে, এসো প্রাণের আলোয় করি দূর...
শাহজাদপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত
মোঃ শফিকুল ইসলাম ফারুক,শাহজাদপুরঃ আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহজাদপুর রবিন্দ্র কাছারি বাড়ী মি...