শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম : গাজায় ইসরাইলি বাহিনী দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তিন দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় প্রচণ্ড হামলা শুরু করে ইসরাইল। শুক্রবারের হামলায় একটি শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে।শুক্রবারের হামলায় একটি ১০ বছরের শিশু নিহত হয়। একটি মসজিদের কাছে ইসরাইলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়। এতে গাজাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।এদিকে আমেরিকা ও জাতিসংঘ নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার নিন্দা করেছে। তারা উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানায়। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘এই দ্বন্দ্বের কারণে বেসামরিকদের আরও দুর্ভোগ ও মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।’ মানবিক যুদ্ধবিরতিতে ফিরে যাওয়ার জন্য দুপক্ষকে দ্রুত একটি পথ বের করে, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য কায়রোতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র যশ আরনেস্ট বলেন, সব পক্ষের উচিত টেকসই যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করা। আর জাতিসংঘ বলেছে, বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়াটা ‘অসহ্যকর’।তিনি বলেন, ‘হামাসের রকেট হামলা শুরু করার সিদ্ধান্ত ইসরাইল এবং গাজার মানুষদের জন্য শুধু মারাত্মক ঝুঁকিই তৈরি করেনি, এটি ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা পূরণেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।’জাতিসংঘ জানিয়েছে, চার সপ্তাহ ধরে চলা গাজার সহিংসতায় ১৯০০শ’রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। একই সময় ইসরাইলের দিকে ৬৭ জন নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে ৬৪ জনই সেনা সদস্য।হামাস জানিয়েছে, গাজা থেকে অবরোধ প্রত্যাহার না করা হলে তারা যুদ্ধবিরতি মানবে না।তবে সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা মোস্তফা বারগুটি শুক্রবার বিবিসিকে বলেছেন, শুক্রবারের রকেট হামাস ছোড়েনি। ফিলিস্তিনির অন্য গ্রুপ ছুড়ে থাকতে পারে। এদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের হেবরন শহরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় আহত নাদির ইদ্রিস শনিবার সকালে মারা গেছে। গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভকালে সেনাবাহিনীর হামলায় সে আহত হয়।হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, নাদির ইদ্রিস (২২) শনিবার সকালে হেবরনের আল মিজান হাসপাতালে মারা গেছে। একই সূত্র বলছে, বিক্ষোভকালে ২৯ বছর বয়সী অপর এক তরুণসহ বেশকিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আহত হয়।ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, তিনশ বিক্ষোভকারী জ্বলন্ত টায়ার ও ইটপাথর নিয়ে সৈন্যদের ওপর হামলা চালায়। সৈন্যরা রাইফেলসহ দাঙ্গাবিরোধী অস্ত্র নিয়ে তাদের মোকাবিলা করে।হেবরনে প্রায় দুহাজার লোক গাজা হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভ করে। এদের অধিকাংশের হাতে হামাসের সবুজ পতাকা উড়তে দেখা গেছে। এছাড়া ফিলিস্তিনিরা শুক্রবার বিকালে নাবলুস ও বেথেলহেমেও বিক্ষোভ করে। তবে সেখানে কেউ হতাহত হয়নি।জানা গেছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে হামাস ও প্যালেস্টাইনি লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো গত আট বছর ধরে গাজায় আরোপিত ইসরাইলের জল, স্থল ও আকাশপথের অবরোধ প্রত্যাহার। পাশাপাশি ইসরাইলি কারাগারে আটক গুরুত্বপূর্ণ ১২৫ জন ফিলিস্তিনিকে বন্দিকে ছেড়ে দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় হামলা ইচ্ছাকৃত ও যুদ্ধাপরাধ: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বা এআই বলেছে, গাজায় হাসপাতালগুলো এবং চিকিত্সক টিমগুলোর ওপর ইসরাইলি হামলার ঘটনা ছিল ইচ্ছাকৃত ও সুপরিকল্পিত। হাসপাতাল ও ত্রাণসংস্থাগুলোর কর্মীদের প্রামাণ্য বক্তব্যের ভিত্তিতে এআই এ তথ্য দিয়েছে। অ্যামনেস্টি শুক্রবার এক বিবৃতিতে ‘মুফাককারাহ আল ইসলাম’ নামের একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘আমরা অ্যাম্বুলেন্সগুলোর চালক ও নার্সদের বক্তব্য শুনেছি। তারা বলেছেন, গুলি ও বোমা-বৃষ্টির মধ্যেও তত্পরতা চালিয়ে গেছেন এবং অন্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে তাদের অনেক সহকর্মী নিহত হয়েছেন।’বিবৃতিতে সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, ত্রাণকর্মী ও চিকিত্সকদের ওপর হামলা নিষিদ্ধ এবং এ ধরনের হামলাকে যুদ্ধ-অপরাধ বলা যায়।’ এআই বলেছে, নানা সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, ইসরাইল আহতদের কাছে চিকিত্সকদের যাতায়াত ও লাশ সরিয়ে নেয়ার কাজেও বাধা দিয়েছে। এআইর মধ্যপ্রাচ্য শাখা এ বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে ইসরাইলি হামলায় ৬ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন।গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ফিলিস্তিনি চিকিত্সক টিমগুলোর ওপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলায় ২১ জন ডাক্তার নিহত এবং ৮৫ জন চিকিত্সক, ত্রাণকর্মী ও নার্স আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও ধ্বংস হয়ে গেছে বহু হাসপাতাল। ইসরাইলি বিমান হামলায় ৮টি হাসপাতাল ও ২০টিরও বেশি ক্লিনিক বা চিকিত্সা-কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। বোমা হামলার কারণে ৫টি হাসপাতাল তার চিকিত্সাসেবা পুরোপুরি বন্ধ করতে বাধ্য হয় এবং ৩৪টি ক্লিনিকও অচল হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে ২০টি অ্যাম্বুলেন্স। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ অপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপকতা নজিরবিহীন হওয়া সত্ত্বেও পাশ্চাত্য এবং তাদের সেবাদাস মুসলিম সরকারগুলো ও এমনকি তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমও এইসব বিষয়ে নীরব রয়েছে। সীমান্ত থেকে পালাচ্ছে ইসরাইলিরা: ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্ত থেকে গত কয়েক সপ্তাহে পালিয়ে গেছে অর্ধেকের বেশি ইসরাইলি নাগরিক। এসব লোক আর তাদের ঘর-বাড়িতে নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে তারা নিজেরাই সন্দেহ প্রকাশ করেছে।মার্কিন দৈনিক লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস শুক্রবার এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ইসরাইলের উত্তরে নেগেভ এলাকা থেকে শত শত ইসরাইলি পরিবার চলে গেছে। অথচ এই নেগেভ হচ্ছে পর্যটনের দিক দিয়ে খুবই আকর্ষণীয় এলাকা।চলতি সপ্তাহে এক জরিপ রিপোর্ট বলা হয়েছে, নেগেভ এলাকার প্রায় শতকরা ২১ ভাগ পরিবার অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চিন্তা করছে। হামাসের সঙ্গে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইলের সেনাবাহিনী এলাকায় ফিরে আসার আহ্বান জানালেও সেখান থেকে চলে যাওয়া লোকজন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে এবং এখনও তারা ফিরে আসেনি। অবশ্য ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে এবং ইসরাইলের একগুঁয়েমির কারণে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি করা সম্ভব হয়নি। শনিবার সকাল থেকে আবার দুপক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টাহামলা শুরু হয়েছে।
সম্পর্কিত সংবাদ
শিক্ষাঙ্গন
শাহজাদপুর খুকনী বহুমুখী উচ্চ কিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত
শামছুর রহমান শিশির, নিজস্ব প্রতিবেদক : সিরাজগঞ্জের তাঁতসমৃদ্ধ শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের খুকনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যা...
আইন-আদালত
শাহজাদপুরে আদালত পরিদর্শনে জেলা ও দায়রা জজ
এমএ হান্নান, কোর্ট রিপোর্টার : আজ সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ফাহমিদা কাদের শাহজাদপুর বন্যায় প্লাবিত উপজেলা...
ফটোগ্যালারী
বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )
শিল্প ও সাহিত্য
শাহজাদপুরে লোকনাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শাহজাদপুরে গত বৃহস্পতিবার রাতে লোকনাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয় । শাহজাদপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বর...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে চলছে মখদুমিয়া জামে মসজিদের উন্নয়নের কাজ
মোঃ শফিকুল ইসলাম ফারুক : প্রায় সাড়ে আট শত বছরের পুরাতন হযরত মখদুম শাহ্দৌলা শহীদ ইয়েমেনী (রহঃ) এর পবিত্র মাজার সংলগ্ন মখদ...
রাজনীতি
মন্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আবদুল মজিদ মন্ডল আর নেই
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুল মজিদ মন্ডল (৭২) আর ন...