বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

Abul-Basar-Pictureবাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মরণে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’ নামক একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। এ খবরটি শাহজাদপুর বাসীর জন্য যেমন আনন্দের তেমনি দেশবাসীও এ গর্বের অংশীদার। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত একটি বিল মহান জাতীয় সংসদে অনুমোদন পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত এমন একটি চমকপ্রদ এবং আনন্দের বার্তা গত ৫ জানুয়ারী-২০১৩ ইং সালে একটি জাতীয় দৈনিক এ প্রকাশ পেয়েছিল। গত ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে পত্র দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি চূড়ান্ত সিন্ধান্তের কথা জানানো হয়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতেই হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস। একই সঙ্গে আরও দুটি ক্যাম্পাস কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও নওগার পতিসরে থাকবে। এ খবরটি যারা সে সময়ে পত্রিকায় পড়েছিলেন এবং শুনেছিলেন এমন জ্ঞানপিপাসু,শিক্ষানুরাগী প্রতিটি বাঙালির প্রাণে ও অনুভূতিতে নতুন ভাবে সারা জাগিয়েছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারে বাংলাদেশে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথভাবে অর্থায়নে এ বিশ্বদ্যিালয়টি প্রতিষ্ঠা পাবে বলে জানা গিয়েছিল। কবির স্মরণে তাঁরই আদিপুরুষদের পূন্যভূমি পূর্ব বাংলায় তাঁর নিজস্ব দর্শণের আলোকে, শান্তিনিকেতনের আদলে প্রতিষ্ঠা পেতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্প-সাহিত্য ছাড়াও পাঠ্যক্রমে কলা’র পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বানিজ্য অনুষদও থাকবে বলে সে সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এ খবরটি নতুন প্রজন্মের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে আনন্দের এবং উৎসাহের আগাম বার্তা হিসেবে পৌছে গিয়েছিল।

রবীন্দ্র দর্শণের সঙ্গে বাঙালির জীবনসমৃদ্ধির যে সম্পর্ক রয়েছে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ এর শ্রেষ্ঠ প্রমান হিসেবে আমাদের সামনে সাক্ষ্য বহন করছে। স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁরই স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারাটা অনেকটা ঋন পরিশোধের দায়ভার মুক্ত হতে পারার আনন্দও বটে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে হঠাৎ করেই যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী রাষ্ট্র ও সমাজ ও রাজনীতি অর্থনীতি সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। শান্তি ও প্রগতির পথে আমাদের অবস্থান কোথায় রয়েছে ? ইতিহাসের বিবর্তন ধারায় এ পরিবর্তন মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণে কতটুকু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে ? বিষয়টি নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে । একপক্ষ দাবী করছেন মানব সভ্যতা এগিয়ে চলেছে। অন্য পক্ষ বলছেন আমরা ক্রমাগত পিছনের দিকে যাচ্ছি। বিষয়টি দার্শনিক বিবেচনায় এবং দর্শণের আলোকে আমাদেরকে বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথের দর্শণ অনুসরণীয়। জাতিগত বাঙালিরা যদি বিষয়টির গভীরে অনুসন্ধানে আগ্রহী হয় সে ক্ষেত্রে পিছনের সত্য ইতিহাসকে খুঁজে বের করা উত্তম বলে বিবেচিত হবে। আমাদের অগ্র-পশ্চাত রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,ভারতবর্ষের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতী (হিন্দু-মুসলমান) তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পকিস্তান নামক দু’টি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। নানা বৈষম্য ও শোষন-বঞ্চনার কারনে রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্থান টিকে থাকতে পরেনি। বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার উন্মেষ ঘটার মধ্যদিয়ে শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭১ সালের এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের আতœহুতি,২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিলো। জাতীয়তাবাদের প্রথম ভিত্তি রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ইতহাস এমনটাই সাক্ষ্যবহন করে। বৃটিশ শাসনামলে পরধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হতে ১৯১৭ সালে জাতীয়তাবাদের ওপর ইংরেজি বক্তৃতায় রাষ্ট্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি ডিমের খোসার সঙ্গত উপমাটি ব্যবহার করেছিলেন। রাষ্টের কাজ ডিমের খোসার মতো- বলেছিলেন তিনি। আর ওই খোসার উপযোগিতা যে একেক পক্ষের কাছে একেক রকমের- সেটাই ছিল তাঁর উল্লেখ করার মত বিশেষ বিষয়। ডিমের ভেতরের স্থানটির জন্য খোসাটি কাজ করে নিরাপত্তাদাতার; কিন্তু প্রাতরাশকারীর জন্য খোসার উপকার একেবারেই অন্য প্রকারের। পরাধীন ভারতবর্ষে যে রাষ্ট্রকে রবীন্দ্রনাথ নির্মম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে জেনেছেন সেটি প্রাতরাশকারীরই কাজে লেগেছে, ছানার কোনো উপকার করেনি। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের দীর্ঘ ৪৪ বছর উত্তরণের পর আমাদের নির্মম অভিজ্ঞতা এই যে, রাষ্ট্র এখনো প্রাত রাশকারীদেরই কাজে লেগে রয়েছে, তাদের স্বার্থেই ব্যবহার হচ্ছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ব্যাপকসংখ্যক জনগোষ্ঠি ছানারা এখনও শোষিত বঞ্চিতই রয়ে গেছে। তাদের কোন উপকার আসছে না। শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজ, সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনীতি, শান্তিপূর্ণ সহবাস্থানসহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নামক রাষ্টের সৃষ্টির জন্য বাঙালিজাতী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন অবস্থানে আমরা রয়েছি ? এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক চরিত্র এবং চেহারাটা কি ? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্ন দু’টির উত্তর কারো অজানা নয়। আজকের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে পরেছে। অর্থনীতিতে চলছে একধরনের লুটতরাজের প্রতিযোগিতা। সংস্কৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে বহুমুখী সংকট। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি- শোষক, লুটতারাজকারী,গণহত্যার পৃষ্ঠপোষক ও সহযোগী, প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনকারী, অগ্নীসংযোগ, ধর্ষণকারী পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর দোষর আলবদর,আলসামস্ সহ শান্তিকমিটির দালাল হন্তকদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম চলছে, পর্যায়ক্রমে এ ধারা অব্যাহত আছে। এখনও আমরা সকলের বিচার সম্পন্ন করতে পারিনি। তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে পূনর্বাসিত হয়েছে। তাদের অনেককে আমরা আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধে ফেলেছি। তাদেরকে আঁচলের তলায় স্থান করে দিয়েছি। এই স্বাধীন বাংলাদেশে লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা পরজিত শক্তির গাড়ীতেও পতাকা উড়তে দেখেছি আমরা। যাদের হাতে এখনো হাজারো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাধারণ নাগরীক নারীপুরুষের রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। এক নির্মম রাজনৈতিক পালাবদলের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছি আমরা। ধর্মের নামে উগ্রসাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র কলঙ্কিত ইতিহাস বয়ে চলেছে। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের শ্রেনী চরিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব একই ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। সেখান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষ-বিপক্ষ আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মত সৎ সাহসও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। নীতি নৈতিকতার সবটুকু হারিয়ে লন্ঠুনবৃত্তির সঞ্চিত পুঁজির সুখভোগ ও নিজ প্রজন্মের নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা মোহিত হয়ে পড়েছি। ইহকালের সুখভোগ এবং লুন্ঠিত অর্থের কিঞ্চিত দান-খয়রাত করে জনসেবার নামে রাজনীতিতে অংশগ্রহন করে জাগতিক পাঁপ মোচন এবং পারলৌকিক বেহেস্ত পাবার অধর্মের ধর্ম ফেরীকরে আমরা ভালোমানুষের আলখেল্লার মধ্যে ঢুকে পড়েছি। পুঁজি ব্যায়ে ইহকাল-পরকালের সুখভোগের আহম্মকি চিন্তা-চেতনার মধ্যে হাবুডুবু খাছি। এটাই আমাদের সংস্কৃতি এটাই আমাদের রাজনীতির ধারা বলে বিবেচিত হচ্ছে। বাঙাগালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করেই স্বাধীন বাংলাদেশ নামক যে জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সেই জাতি এবং জাতিরাষ্ট্র রক্ষার জন্যই আজকে রবীন্দ্র দর্শনের আলোকে আগামি প্রজন্মকে শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করার আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পরাধীন ভারতীয় মধ্যবিত্তের মনে স্বাধীনতার স্পৃহাকে গভীর করার ব্যাপারে অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন কবিগুরু। সে কারনে তাঁর গান ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে। একই কারনে তাঁর গান বাংলাদেশেরও জাতীয় সঙ্গীত হয়েছে, যদিও এ বাংলাদেশ সেই অবিভক্ত বাংলা নয়। তিনি তার রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে কখনো ঈশ্বরকে টেনে আনেননি। তিনি সর্বদা বলেছেন, ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়। অন্যদের মত মানুষের দূর্ভোগের কারণ ঐশ্বরিক জগতে এমন দর্শনে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ যে ইতিহাসে বিশ্বাসী ছিলেন, সে ইতিহাস রাজা-বাদশার মারামারি, কাটাকাটির বিবরণ নয়। সেটি ছিল সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ইতিহাস। যে ইতিহাস জনগণ রচনা করে, কঠিন শ্রমে। মানুষের উন্নত রুচি বোধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি মনে করতেন, উন্নত রুচির মধ্যেই থাকে নৈতিকতা বোধ। ন্যায়-অন্যায়ের চেতনা না থাকলে মানুষ মহৎ হয়না, তা যতই বৃহৎ হোক না কেন কিম্বা উঁচু। কবির চিন্তায়- প্রকৃতি হলো মানুষের অন্তরের গভীরে জন্ম নেওয়া এক সৃজন শক্তি, যা মানুষকে একটি স্থির কেন্দ্র দেয়। রবীন্দ্রনাথ মুক্তি খুঁজেছেন মানুষের চিরমুক্তিতে, তার প্রকৃতির অন্তরে নিজেকে স্থাপনের মধ্যে। মানুষের ভেতরের বিবর্ণতা, অথবা ধূসর-বাদামি রঙগুলো এবং ক্ষয় হতে থাকা জীবনশক্তিকে ছাপিয়ে প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি যাচনা করেছেন সবুজকে। এই সবুজ- প্রকৃতির,চিত্তের, মানুষের আদি ঠিকানার। প্রকৃতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, প্রকৃতি শুধু উদ্ভিদ এবং জলহাওয়ার জগৎ নয়, এ প্রকৃতি মানুষের ভেতরে মহাকালের কোনো ছায়াপাতের একটি রূপ যাকে ধরা যায় না, ছোয়া যায় না, যাকে শুধু নিজের একান্তে অনুভব করা যায়। এর সবকিছুই রবীন্দ্রদর্শনের আংশিক কথা লিপি। চেতনাগত অবক্ষয়ের মধ্যদিয়ে রবীন্দ্র দর্শনের আলোকবর্তিকা থেকে আমরা দূরে চলে এসেছি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৭৫ সালের বর্বর ও দুঃখজনক পট পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যে রাজনীতির সূচনা হয়েছিল তখনই এর ভয়ংকর পরিনতির প্রমাদ গুনেছিলেন মুক্তচিন্তার মানুষেরা। এরপর থেকেই মূল চেতনা বোধের যায়গা থেকে পিছুহটা। এখনও এই ধারাবাহিকতার কোন ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু মানুষ থেমে থাকেনা। পিছনে হাটা থেকে সামনে এগুবার দর্শণ খুঁজতে থাকেন এদেশের মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা। এদেরই একজন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রয়াত ড. মযহারুল ইসলাম। রবীন্দ্র দর্শনের আলোকে দেশের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য তিনি দেশের রবীন্দ্র-প্রেমিক ও মানবতাবাদীদের উদ্যোগে ১৯৯২ সালে প্রণীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আইনের আওতায় ১৯৯৫ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়ন এলাকার সাতবাড়ীয়া গ্রামে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মরণে ‘টেগর পিস ইউনির্ভাসিটি’ নামে একটি প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময়ে দেশের খ্যাতনাম ব্যক্তিদের নিয়ে ট্রাষ্টিবোর্ড গঠিত হয়। প্রখ্যাত একাডেমিসিয়ানদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল একাডেমিক কাউন্সিল। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ড. মযহারুল ইসলামকে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐ সময়ে ৭০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছিল। বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য যথা নিয়মে আবেদনও করা হয় বিশ্বদ্যিালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে। পরবর্তীতে নানা জটিলতার কারনে শেষাবধি ‘টেগর গ্যেটে পিস ইউনির্ভাসিটি’ স্থাপনের উদ্যোগ থেমে যায়। ড. মযহারুল ইসলামের মৃত্যুর পর ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিরাজগঞ্জ জেলার রবীন্দ্র-ভক্ত শিক্ষানুরাগীরা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়িকে ঘিড়ে কবির ১৪৮তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের স্মরণে কবিগুরুর নামে ‘রবীন্দ্র্র বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করেন। বিষয়টি পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে একই দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এবং নওগার পতিসরের রবীন্দ্র-ভক্তরা। দেশব্যাপি মানবতাবাদীদের রবীন্দ্র-ভক্তদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষনীয় হয়ে ওঠে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্থান নিয়ে শুরু হয় রশি টানাটানি। এনিয়ে নানামত প্রকাশ করে পত্র পত্রিকায় প্রবন্ধ ছাপা হয়। অবশেষে রবীন্দ্রনাথের তিন কাছারিবাড়ীতেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিন্ধান্তকে সাদরে গ্রহন করেছে দেশবাসী। কবিগুরুর ১৫০তম জন্মদিন পালনে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলন। সে সময়ে সিরাজগঞ্জে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে। এর পরেও থেমে থাকেননি সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত ড. মযহারুল ইসলামের পুত্র চয়ন ইসলাম। নানা বিতর্ক ও সমালোচনা মাথায় নিয়ে নিজ উদ্যোগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের বিসিক বাসষ্ট্যান্ডে স্থাপন করেন রবীন্দ্র্র ভাস্কর্য। পরবর্তীতে তিনি অভিমানে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নিজেকে অনেকটা আড়াল করেন। এরপর এলাকার সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের উদ্যোগে নব উদ্যোমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। অবশেষে গত বছর ৮ ই মে ২০১৫ ইং, ২৫ শে বৈশাখ ১৪২২ বাংলা সনে শাহজাদপুরে আয়োজিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪ তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এসে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শাহজাদপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত জনতার মাঝে শাহজাদপরে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যাল বাংলাদেশ’, স্থাপনের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন। শেষাবধি ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ সিন্ধান্ত ও অর্থায়নে শাহজাদপুরে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের চূড়ান্ত সিন্ধান্ত ও ঘোষনা কার্যকর হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে কার বেশী অবদান এ রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়িয়ে সবাই বলুন ইতিহাসের বিবর্তনের ধারায় সত্য প্রতিষ্ঠা পেল। অবদান বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরীকের পাশাপাশি শাজাদপুরের আমজনতার। কারণ তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে প্রাণের মাঝে ধরে রেখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যকরী পদক্ষেপ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ায় এখন বাংলাদেশের প্রতিটি বাঙালির প্রত্যয় ও প্রত্যাশা অনেকটা কবিগুরুর ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতার ছন্দের মত-- আজি এ প্রভাতের রবির কর/ কেমনে পশিল প্রাণের ‘পর,/ কেমনে পশিল গুহার আঁধারে/ প্রভাত-পাখির গান।............ ওরে, চারিদিকে মোর / এ কী কারাগার ঘোর!/ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর!/ ওরে, আজ কী গান গেয়েছে পাখি,/ এসেছে রবির কর!

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুর খুকনী বহুমুখী উচ্চ কিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর খুকনী বহুমুখী উচ্চ কিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত

শামছুর রহমান শিশির, নিজস্ব প্রতিবেদক : সিরাজগঞ্জের তাঁতসমৃদ্ধ শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের খুকনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যা...

শাহজাদপুরে লোকনাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত

শিল্প ও সাহিত্য

শাহজাদপুরে লোকনাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শাহজাদপুরে গত বৃহস্পতিবার রাতে লোকনাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয় । শাহজাদপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বর...

শাহজাদপুরে তথ্য অধিকার বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

তথ্য-প্রযুক্তি

শাহজাদপুরে তথ্য অধিকার বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আজ মঙ্গলবার দিন ব্যাপী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হলরুমে তথ্য অধিকা...

শাহজাদপুরে বাংলা লোকনাট্য উৎসব হচ্ছে আজ

শাহজাদপুরে বাংলা লোকনাট্য উৎসব হচ্ছে আজ

ডেস্ক রিপোর্টঃ হাতের মুঠোয় হাজার বছর, আমরা চলেছি সামনে, এসো প্রাণের আলোয় করি দূর...

শাহজাদপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

শাহজাদপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

মোঃ শফিকুল ইসলাম ফারুক,শাহজাদপুরঃ আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহজাদপুর রবিন্দ্র কাছারি বাড়ী মি...

ক্ষুদে পাখির রাক্ষুসে বাসায় ভেঙে পড়ে গাছ'