মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
শামছুর রহমান শিশির : তীব্র কনকনে ঠান্ডা আর ঘনকুয়াশাকে উপেক্ষা করে সরিষা ক্ষেতের পাশে ভ্রাম্যমান অবস্থায় মৌচাষ করে কষ্টার্জিত মধু সংগ্রহের পর বাজারে বিক্রি করে লাভবান হলেও এক শ্রেণীর দালালদের বেড়াজালে আটকে তারা হাÑহুঁতাশ করছে। তাদের লাভের মিঠাই (কষ্টার্জিত মধু) বিভিন্ন পন্থায় খেয়ে ফেলছে সারাদেশে মধু সরবরাহকারী ওই দালাল শ্রেণীর পিপঁড়ে ( রূপক অর্থে)। এতে মৌচাষীরা শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতির সন্মুখীনই হচ্ছেন। মৌচাষীদের মাঠায় কাঠাল ভেঙ্গে তিন/চারগুণ বেশী মূল্যে বাজারে মধু বিক্রি করে গুটিকয়েক দালালেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন অসাধু পন্থা অবলম্বন ও বাজারে মধুর চাহিদা নেই বলে অপ্রপ্রচার চালিয়ে মৌচাষীদের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত বহু কম মূল্যে ক্রয় করে মৌচাষীদের মুনাফার সিংগভাগের অংশে ভাগ বসাচ্ছেন। সরকারিভাবে মধু সংরক্ষণ ও বিক্রির সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে দেশের গুটিকয়েক দালালেরা মৌখামারীদের ঘারে বন্দুক রেখে তাদের কষ্টার্জিত মুনাফার বেশী অংশ খেয়ে ফেললেও দেখার কেই নেই। চলনবিলের ভ্রাম্যমান মৌচাষী সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার পানিয়া গ্রামের মৃত মনসুর আলী গাজীর ছেলে বুলবুল আহমেদ (৩০) জানান,তার মৌমাছির খামারে ৯০টি মৌমাছির বাক্স রয়েছে। তিনি চার বছর আগে সাতক্ষীরার বিসিকে মৌচাষের ওপর ৭দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌচাষ শুরু করেন। চার বছরের ব্যবধানে বর্তমানে তার মৌমাছির খামারে প্রায় ১০ লাখ টাকার পূঁজি রয়েছে। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, চার বছরে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মৌমাছি লালন পালন ও মধু বিক্রি করে পূঁজি ১০ লাখ টাকায় উপনীত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ১০ লাখ টাকা পূঁজি বিনিয়োগ করে যে পরিমান মধু আহরণ করা হচ্ছে তা বাজারজাত করতে তাদের মতো সকল মৌচাষীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। যারা দালালচক্রের কাছে মধু বিক্রি করছেন তারা প্রতি লিটার মধু পাইকারী হারে বিক্রি করছেন মাত্র ১শ’ টাকায়। ৫শ’ মৌচাষী কর্তৃক সংগৃহিত মধুর সিংহভাগই চলে যাচ্ছে দালালচক্রের হাতে। এসব দালালেরা নামী দামী বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে অপেক্ষাকৃত অধিক মূলে বিক্রি করে মৌচাষীদের প্রাপ্য মুনাফার সিংহভাগ লুটেপুটে খাচ্ছেন। মুষ্টিমেয় দালালেরা মাত্র ১শ’ টাকা থেকে ১শ’ ৫০ টাকা লিটার প্রতি মধু ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে নামী দামী ব্রান্ডের বোতলে মোড়কজাত করে বাজারে লিটার প্রতি বিক্রি করছে ৪’শ টাকা থেকে ৪শ’ ৫০ টাকা। এক্ষেত্রে মৌচাষীদের সংগৃহিত মধু বিক্রি করে তারা লিটারপ্রতি মাত্র ১শ’ থেকে ১শ’ ৫০ টাকা আয় করলেও দালালেরা এর চাইতে তিনগুণ-চারগুণ বেশী মুনাফা লুফে নিচ্ছেন। বাজারে এপি কালোজিরা মধু ৫’শ গ্রাম ২৯৫ টাকা,এপি মধু ২৫০ গ্রাম ১৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে যা মৌচাষীদের কাছ থেকে ক্রয়মূল্যের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশী। মৌচাষীরা অভিযোগ করে জানান, সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের অভাবে দেশের প্রায় ৫’ শতাধিক মৌচাষীরা তাদের কষ্টার্জিত ২ হাজার মেট্রিকটন সংগৃহিত মধুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে মৌচাষীদের এসব সমস্যা সমাধানে তেমন কোন কার্যক্রম না থাকায় ওই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে দেশের মুষ্টিমেয় দালালচক্র। মৌচাষী কর্তৃক বছরে সংগৃহিত মধু বিক্রি করে তারা ২শ’ কোটি টাকা পেলেও দালালেরা ওই মধু ৬-৭শ’ কোটি টাকায় সারাদেশে বিক্রি করছে। ফলে মৌচাষীদের চেয়ে মুষ্টিমেয় দালালেরাই মৌচাষীদের চোখে ধুলো দিয়ে কষ্ট না করেই কেষ্ট হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই দালাল চক্রের সংখ্যাগরিষ্ঠই টাউট প্রকৃতির। তারা মৌমাছি চাষ না করেই মৌচাষীদের মধ্যে বিভ্রান্তকরও আতœঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। উপায়ন্তর না থাকায় স্বাবলম্বী মৌচাষীরা এ দালাল শ্রেণীর ওপর নীর্ভরশীল হয়ে পড়ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌচাষীদের মধ্যে অর্থ সহায়তা দিয়ে তাদের চড়াসূদের বেড়াজালে আটকাচ্ছে। এক্ষেত্রে দালালেরা শর্ত জুড়ে দিচ্ছে, মৌচাষ করে বছরে যে পরিমান মধু সংগৃহিত হবে তা অন্য কোথাও বিক্রি না করে তাদের দিতে হবে। বিপদেÑআপদে দালালদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগীতা পাওয়ায় মৌচাষীরা ভালমন্দ না বুঝেই চোঁখ বন্ধ করে দালালদের হাতে মধু তুলে দিচ্ছে। মৌচাষীদের আরও অভিযোগ, মৌচাষীদের মধ্যে সহজশর্তে ব্যাংক ঋণের সুব্যবস্থা না থাকায় ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশের ৫’ শতাধিক মৌচাষীরা পুরোপুরি দালালদের ওপর নীর্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মৌচাষীদের অজ্ঞতার সুযোগে দালালচক্র এভাবে মুনাফা লুটছে। ওই দালাল চক্রের কাছে দিনদিন মৌচাষীরা নানাভাবে জিম্মি হয়ে পড়ছে। অবস্থা পরিত্রানে দেশের মৌচাষীদের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে মৌমাছি চাষে ঋণদান কর্মসূচী গ্রহন ও যথাযথ সরকরি পৃষ্ঠপোষকতা করা অতীব জরুরী বলে তারা জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

৩’শ ৬০ জন দুগ্ধদাই মাতাকে ভাতা কার্ড প্রদান

৩’শ ৬০ জন দুগ্ধদাই মাতাকে ভাতা কার্ড প্রদান

শাহজাদপুর  প্রতিনিধি: গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিলের আওতায় শাহজাদপুর পৌরসভা কর্তৃক বাছাইকৃত উপক...

‘করোনা প্রতিরোধে শাহজাদপুরবাসী সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবে বলে বিশ্বাস করি!’  - হাসিবুর রহমান স্বপন এমপি

জানা-অজানা

‘করোনা প্রতিরোধে শাহজাদপুরবাসী সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবে বলে বিশ্বাস করি!’ - হাসিবুর রহমান স্বপন এমপি

শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : ‘অতীতেও আমরা শাহজাদপুরের শান্তিপ্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে নানা বিপদ-আপদ, সং...

ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাহজাদপুর শাখার ৬ বছরে পদার্পনে বর্ণাঢ্য আয়োজন

অর্থ-বাণিজ্য

ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাহজাদপুর শাখার ৬ বছরে পদার্পনে বর্ণাঢ্য আয়োজন

৬ বছরে পদার্পন উপলক্ষে শনিবার (২৯ মে) দুপুরে ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাহজাদপুর শাখা কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও কেক কাটা হয়...

নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হলেন কবির বিন আনোয়ার

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হলেন কবির বিন আনোয়ার

মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার। আজ রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন...

পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়লেন

জাতীয়

পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়লেন

শামছুর রহমান শিশির : আজ পহেলা মার্চ বুধবার শাহজাদপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা নন এমন ১...