নিহত মেহেদী হাসান রনির বাড়ি সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামে এবং মো. রাসেলের বাড়ি কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের জাজিসার গ্রামে।
মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ।
মঙ্গলবার বৈরুতের বন্দর এলাকায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে একশরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে চার হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী ও রাসেল।
মেহেদী হাসান রনির মৃত্যুর খবরে তাদের বাড়ি আসেন প্রতিবেশীরা
বুধবার সকালে মেহেদী হাসান রনির মৃত্যুর সংবাদ আসে তার পরিবারের কাছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা তাজুল ইসলাম আর মা ইনরা বেগম।রনির পারিবার জানায়, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। গ্রামের স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। সুদে টাকা ধার নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ লেবানন যান রনি। তার বাবা তাজুল ইসলামও বাহরাইন প্রবাসী ছিলেন। তিনিও এর মধ্যে দেশে ফেরত আসেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, তার ছেলে বৈরুতে একটি বিপণি বিতানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন বাড়িতে। কিন্তু এতে ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। তাই অন্য কোনো দেশে যেতে চেয়েছিলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তার। বাবার সঙ্গে কথা বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। রাতে রনির এক সহকর্মী ফোন করে জানান তিনি অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার ভোরে আবার ফোন করে জানান রনি মারা গেছেন।
রানির ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপি বলেন, দেশে আসবে বলে দুই ভাগ্নির জন্য চকলেট ও খেলনা কিনে রেখেছিল। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাট করেছিল।
“কিন্তু লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারছিল না। গত পহেলা বৈশাখে ভাইয়ের জন্মদিনে মা নিজ হাতে কেক বানিয়েছিল। ভিডিও কলে আমরা সেই কেক কেটেছিলাম। এখন আমার ভাইয়ের মরদেহটা চাই।”
মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল আমিনুল হক পাভেল বলেন, “ঘটনার পর থেকেই আমি রনির পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। মরদেহ আনার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
বিস্ফোরণে রাসেলের বড়ো ভাই আহত
নিহত মো. রাসেল
নিহত রাসেল কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের জাজিসার গ্রামের মুরশেদ মিয়ার ছেলে।বিস্ফোরণে তার বড়ো ভাই সাদেক মিয়া গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে বৈরুতের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিবারের মধ্যে কাইমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াকুব মিয়া জানান, প্রায় চার বছর আগে রাসেল লেবানন যান। সেখানের তিনি একটি তেলের পাম্পে চাকরি করতেন।
তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট বলে জানান তিনি।