বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
ইউসুফ দেওয়ান রাজুঃ গোধুলী বেলায় দলবেঁধে ঘরে ফেরা দোয়েল-কোয়েল-বাবুই পাখির ঝাঁক আর চোখে পড়ে না। কাশবনে কিচির মিচির শব্দও আর শোনা যায় না, বসন্তকালে কোকিলের কুহু কুহু গানও আর সেরকম শোনা যায় না। অপরুপ সৌন্দর্য্যরে বাংলার প্রকৃতি মাতিয়ে রাখতো দোয়েল, কোয়েল, শালিক, ময়না ও বাবুই পাখির কলতান। কিন্তু এসব চিত্র এখন বিরল। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরির্তণ, বাসযোগ্য বৃক্ষ নিধন, খ্যাদ্য সংকট, ফসলী জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক স্যার ও কিটনাশক ব্যবহার, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং পাখি নিধনকারীদের তান্ডবে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের বাহক নানা প্রকার পাখি। পাখিদের জন্য অনকুল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে পাখি প্রেমিকরা। এরই একটি ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী নামক গ্রামে। পাখি প্রেমিক মামুন বিশ্বাস ও ইমনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ গ্রামটিতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে পাখির অভয়াশ্রম। নিজ অর্থায়নে আরো ৪/৫ পাখি প্রেমিকের সহায়তায় তিনি পাখিদের জন্য ঘর-সংসার গড়ে দিচ্ছেন। গত ৪ মাসে ৩৫০টি গাছে মাটির কলস বেঁধে দিয়েছেন। দেশীয় পাখিগুলো যাতে ওই কলসীতে নিজ নিজ আশ্রয় খুঁজে নেয়। ইতিমধ্যে এ কাজে বেশ সফলতা অর্জন করেছেন তারা। বেশ কয়েকটি মাটির কলসীতে পাখিরাও এসে আশ্রয় নিয়েছে। প্রজনন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। মামুন ও ইমনের অক্লান্ত পরিশ্রমে তাদের এই সাফল্যে গ্রামবাসীসহ আশপাশের লোকজন মুগ্ধ হয়ে পড়েছে। সরেজমিন ঘুরে উদ্যোক্তা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে, জমির পাশে, বিভিন্ন বাসা বাড়ীর গাছের ডালসহ গ্রামটির আনাচে কানাচের বিভিন্ন গাছের মগডালে কলসী বেঁধে দেয়া হয়েছে। ফলে এ গ্রামটি এখন পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আশপাশের লিছিমপুর, রায়পাড়া, সিকদার পাড়া, মধ্যপাড়া, সাতবাড়ীয়া, ভেন্নাগাছি, লক্ষীপুরসহ ১০টি গ্রামকেও এর আওতায় এনে গাছে কলসী সেট করার প্রক্রিয়া চলছে। এ গ্রামের যুবক শাহীন আলম জানান, প্রথম দিকে মামুন ও ইমনকে গ্রামবাসী পাগল বললেও এখন সকলেই এ কাজে উৎসাহ দিয়ে নানাভাবে সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছে। সুজন ও নবী জানান, মাটির কলসীগুলোতে শালিক পাখি বাসা বেঁধেছে, বেশ কয়টিতে বাচ্চা ফুটেও বের হয়েছে। তবে অন্য প্রজাতির পাখিদের মধ্যে দোয়েল পাখি ওই কলসীগুলোতে যাতায়াত করলেও স্থায়ীভাবে বাস করছে না। একই গ্রামের যুবক কামরুল জানান, প্রথমে মামুন তার নিজ বাড়ির গাছে পাচটি কলস বাঁধেন। কিছুদিন যেতেই এসব কলসে আশ্রয় নেয় শালিক পাখি। মামুন আর ইমন অবাক হয়ে দেখতে থাকেন পাখিদের ঘর-সংসার, বংশবৃদ্ধি। নিজেদের সাফল্যে মুগ্ধ হন এ দুইজন। এরপর শুরু হয় গ্রামে কলস লাগানোর কাজ। উদ্যোক্তা মামুন বিশ্বাস জানান, পাখি প্রকৃতির একটি অন্যতম সম্পদ। পাখিদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা না গেলে ধীরে ধীরে সব প্রজাতির পাখিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই আমাদের দেশ থেকে ৪৭ প্রজাতির দেশীয় পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই গত বছরের ডিসেম্বর মাসে গাছে গাছে প্লাস্টিকের বক্স সেট করা মাধ্যমে পাখির অভয়ারন্য সৃষ্টির উদ্যোগ নেই। তবে প্লাস্টিকের বক্সে সফলতা না পাওয়ায় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে মাটির কলসী স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। এতে অনেক সাফল্যও অর্জিত হয়। শালিক পাখি বাসা বাঁধলেও অন্যান্য পাখির মধ্যে দোয়েল আসা যাওয়া করছে। অন্য জাতের পাখির আবাস্থল গড়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। মামুন আরও জানান, পাখি সংরক্ষণ, প্রজনন ও নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ’দি বার্ড সেফটি হাউজ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শাহজাদপুর উপজেলা জুড়ে পাখির নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তুলবেন বলে তিনি জানান। শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হাই জানান, মামুন নিজ উদ্যোগে আগনুকালী গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে পাখির জন্য আবাস্থল তৈরী করছেন। এটি একটি মহতী উদ্যোগ এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহম্মেদ জানান, পাখির জন্য অভয়াশ্রম সৃষ্টির ব্যক্তিগত এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য গ্রামেও যাতে এ ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের উৎসাহতি করার পাশাপাশি সহায়তাও করা হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

রাজনীতি

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...

মেসি জাদু, আলভারেসের জোড়া গোল; ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

খেলাধুলা

মেসি জাদু, আলভারেসের জোড়া গোল; ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ছুটছেই। শুরুতেই হারের পর যেভাবে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, দমানোর সাহস হয়নি কারও।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত, নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর বাধা নেই

আইন-আদালত

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত, নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর বাধা নেই

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা...

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ'র কেন্দ্রে জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি প...

বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ

বাংলাদেশ

বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ

এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচ ঘিরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল জেলা...

শাহজাদপুরে শতবর্ষী খেলার মাঠ রক্ষায় গ্রামবাসীর মানববন্ধন

খেলাধুলা

শাহজাদপুরে শতবর্ষী খেলার মাঠ রক্ষায় গ্রামবাসীর মানববন্ধন

বিষয়টি নিয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, 'শুনেছি স্থানীয় জনগণ মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন করেছে।...